জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ইরানের-ইসরায়েলের সংঘাত (Israel-Iran War) শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম (Worldwide oil price hike) বেড়েই চলেছে। সোমবার (১৬ জুন) সকালেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এমনকি দিনের শুরুতে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি চার ডলার পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
তেলের দাম বৃদ্ধি:
অন্যদিকে আমেরিকার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১০ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ—দাম বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৮ ডলার। গতকাল শনিবারও তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর শুক্রবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম একলাফে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
ঘটনা হল, ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর গত শুক্রবার এক দিনে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, অর্থাৎ এর মধ্যে তেলের দাম এক দিনে আর কখনই এতটা বাড়েনি। এ ছাড়া গত সপ্তাহে আমেরিকার অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ:
সোমবার চতুর্থ দিনে গড়াল ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ। ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছে। আর ইসরায়েলে, ইরানের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৩ জন। এ অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালি (Strair of Hormuz) বন্ধ করার কথা ভাবছে বলে জানা গিয়েছে সেনা মারফত্। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালিপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইসরায়েলের আক্রমণ:
আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানিয়েছে, ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতকারী দেশ। এ ছাড়া ইরান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুতকারী দেশ। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের জ্বালানি সঞ্চয়, নিশানায় রেখেছে ইসরায়েল। যে কোনও মুহুর্তে আক্রমণ করতে পারে সেখানে ইসরায়েল।
শুধু আমেরিকার চাপে এতদিন ইসরায়েল এই হামলা চালায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভালো করেই জানে, ইরানের জ্বালানি ধ্বংস হলে, সারা বিশ্বের জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিই হুমকির মুখে পড়বে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ থাকলে কী হবে?
যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানের পক্ষে এই প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন। বাহরিনে, আমেরিকার পঞ্চম নৌবহর থাকায় ইরানের পক্ষে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা তেমন একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের হেলিমা ক্রফট। তিনি অবশ্য সতর্ক— ইরান ট্যাংকারে হামলা চালাতে পারে, এমনকি মাইনও পেতে রাখতে পারে।
এ ছাড়া হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে আমদানি-রপ্তানির সময় বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে খরচ। ফলে বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা না গেলে চুক্তি বাতিলের ঝুঁকিও আছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি:
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি এমন সময় তৈরি হল, যখন বিশ্ববাজার এমনিতেই নানা অনিশ্চয়তায় জর্জরিত। সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক বসানোর হুমকি দেওয়ায় ইতোমধ্যেই বিশ্ববাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। এতে ব্যয় ও ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল