জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সংঘর্ষবিরতির জল্পনার মাঝেই এবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান! ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরেই সাধারণ মানুষকে সাবধান করতে এয়ার সাইরেন বাজছে ইসরায়েলে। সে দেশের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মধ্য এবং দক্ষিণ ইসরায়েলের শহরগুলিতেই এয়ার সাইরেন বাজছে।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সে দেশে অন্তত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ ইজ়রায়েলের বিরশেবা শহরে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েক জন।
মার্কিন সেনাঘাঁটিতে এই একই কায়দায় হামলা:
মধ্যপ্রাচ্যের চার জায়গায় হামলা। এদিন কাতার ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য়ের আরও তিনটি দেশ যথাক্রমে কুয়েত, ইরাক ও বাহরিনে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে এই একই কায়দায় হামলা চালিয়েছে ইরান। তারা জানিয়েছে, যতটা শক্তি নিয়ে তাদের তিন পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকা হামলা চালিয়েছিল। ঠিক ততটাই শক্তি প্রয়োগ করেছে তারাও। আর এই ঘটনার পরেই সুর নরম ট্রাম্পের। ঘোষণা করেছেন সংঘর্ষ বিরতির।
কিন্তু একটা প্রত্যাঘাতেই কেন নুইয়ে পড়ল আমেরিকা?
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কারণটা কাতার। সেখানে মার্কিন সেনাঘাঁটির নাম আল উদেইদ বায়ুসেনা ঘাঁটি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্য়ম সূত্রের জানা গিয়েছে, কাতারের ওই মার্কিন সেনাঘাঁটিতে হামলার আগে কাতার প্রশাসনকে ইরান গোপনে ‘সতর্ক’ করে দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেন সমস্ত কাতারের নাগরিকদের এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপরই ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটা নাগাদ চলে হামলা। পরপর ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। তবে এই সংখ্যা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: Iran warns America for consequence: ‘ট্রাম্প চুক্তিভঙ্গ করে নাক গলিয়েছেন, বোমা ফেলেছেন! এর পরিণাম আমেরিকাকে ভুগতে হবে…
কিন্তু প্রথম টার্গেট কেন কাতার?
কারণ, মধ্যপ্রাচ্য়ে আমেরিকার ‘হৃদপিণ্ড’ এটাই। এই আল উদেইদ বায়ুসেনা ঘাঁটি পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার তৈরি সবচেয়ে বড় সেনাঘাঁটি। যেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের আর সকল দেশের সেনার গতিবিধি উপর নজরদারি চালায় তারা। তাই কৌশলগত দিক থেকে আল উদেইদে হামলা কার্যত তাৎপর্যপূর্ণ।
দোহা থেকে একদম দক্ষিণ-পশ্চিমের দিকে মোট ৬০ একর জমির উপর বিস্তৃত এই আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটি। যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেই থেকেই মধ্য়প্রাচ্যে আমেরিকার কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টার হয়ে উঠেছে এটি। যেখানে বর্তমানে রয়েছে ১০ হাজারের অধিক মার্কিন সেনা-জওয়ান।
আমেরিকার প্রতিক্রিয়া:
আমেরিকা জানিয়েছে, হামলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার কোনও প্রভাব পড়েনি তাদের উপর। অক্ষত রয়েছেন জওয়ানরা। অন্য দিকে, এই হামলার পর ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ একটি বিবৃতি মাধ্যমে স্পষ্ট করেছে, ‘বন্ধু কাতারের সঙ্গে ইরানের কোনও শত্রুতা নেই। এমনকি, এই হামলা কোনও ভাবেই তাদের বিরুদ্ধে নয়। কাতারের মানুষের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক অটুট থাক।’
আরও পড়ুন: Strait of Hormuz: হরমুজ প্রণালী বন্ধ করছে ইরান, ভারতের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব! আপনার পকেটেও টান, কেন? চার পয়েন্টে জানুন…
সংঘর্ষবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি খারিজ:
আর এই সংঘর্ষবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি খারিজ করার পরেই ইজ়রায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইরান। এমনটাই জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। মঙ্গলবার ইজরায়েল সেনার তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, ‘কিছুক্ষণ আগে আইডিএফ ইরান থেকে ইজরায়েলের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। যে কোনও রকম হামলা প্রতিহত করতে আমাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সক্রিয় রয়েছে।’ অন্যদিকে, তেহরানেও ইসরায়েলের দিক থেকে মিসাইল ছোড়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ইসরায়েলের আকাশজুড়ে শুধু সাইরেন:
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ইজরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক জায়গায় সাইরেন বাজতে শোনা গিয়েছে। দক্ষিণের বেয়ারশেবাতে মিসাইল আছড়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। পাশাপাশি আরও একাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। হামলায় আশঙ্কায় ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর তরফে বাসিন্দাদের সুরক্ষিত জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরানের রাজধানী তেহরানেও মঙ্গলবার ভোরে ইজরায়েলের তরফে মিসাইল ছোড়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, তেহরানের মধ্যাঞ্চলে আকাশে ব্যাপক কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গিয়েছে। সবমিলিয়ে ১২ দিন ধরে যুদ্ধ চলার পর যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল তাতে আপাতত দাড়ি পড়ল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা:
উল্লেখ্য, সোমবার ভারতীয় সময় মধ্যরাতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষবিরোধী চুক্তি হয়েছে, যেখানে দু’দেশই যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করেছে।
সমাজমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘আগামী ছ’ঘণ্টার মধ্যে ইরান-ইজরায়েল দু’পক্ষই সম্পূর্ণ সংঘর্ষবিরতিতে যাবে। এর শুরুটা করবে ইরান (প্রথম ১২ ঘণ্টা)। তাকে অনুসরণ করবে ইজরায়েল (পরের ১২ ঘণ্টা)। একপক্ষের সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করলে অপর পক্ষও শান্তি বজায় রাখবে। ২৪ ঘণ্টা পর বারো দিন ব্যাপী যুদ্ধের ইতি।’
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)