অর্নবাংশু নিয়োগী: দেশে নয়া তিন ফৌজদারি আইন চালু হল আজ থেকে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করলেন কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীদের একাংশ। ১৮৬০ সালের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’-র পরিবর্তে চালু হল ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিন্যাল প্রসিডিওর অ্যাক্টের’ পরিবর্তে চালু হল ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্টের পরিবর্তে চালু হল ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’। ন্যায় সংহিতায় বাদ পড়েছে ১৯ পুরনো বিধান। বিরোধীদের ঘোর আপত্তি থাকা সত্বেও তিন আইন কার্যকর করা হল।
আরও পড়ুন-ডেপুটি স্পিকার অবধেশ প্রসাদ? মমতার প্রস্তাব মানল কংগ্রেস!
নতুন আইন কী কী বদল
## পুলিশি তদন্তের ক্ষেত্রে বা যে কোনও তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের ক্ষেত্রে ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক।
##পুলিশি হেফাজতের সময়সীমা ১৪ দিন থেকে বাড়িয়ে ৪০ দিন করা হয়েছে। আগের আইন অনুযায়ী একবার পুলিশি হেফাজত থেকে জেল হেফাজত হলে পুনরায় পুলিশি হেফাজত নেওয়া যেত না। নতুন আইন অনুযায়ী তদন্তকারী সংস্থা চাইলে ৪০ দিন সময়সীমার মধ্যে যতবার ইচ্ছে যে হেফাজত থেকে পুলিসি হেফাজত নিতে পারবে।
## আগের বিবাহ গোপন করে যদি নতুন কাউকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ ন্যূনতম ১০ বছর। সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন।
## সন্ত্রাসবাদে যুক্ত অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে প্যারোলের কোনও সুযোগ থাকছে না।
## সাক্ষীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
## ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা আইন অনুযায়ী ৩৫ সাব সেকশন ৭ অনুযায়ী গ্রেফতারি পরোয়ানায় ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে।
## গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে সংজ্ঞায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে।
## সঙ্গবদ্ধ ভাবে ৫ জন বা তার অধিক ব্যক্তি কোন ঘটনা ঘটালে বা হত্যা সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড।
## 12 বছর বা তার নিচে কোনও নাবালিকাকে ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
## পুলিশি তদন্তের সময়সীমা নির্দিষ্ট ভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
## পণ ঘটিত কারণে কোন মহিলা মৃত্যু হলে ন্যূনতম সাজা সাত বছর সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
## সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধে (অপহরণ, ডাকাতি, মুক্তিপণ, সাইবার ক্রাইম) ক্ষেত্রে কেউ মারা গেলে ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ
## চালকের অসতর্কতায় কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে দুই থেকে পাঁচ বছরের জেল।
## ছিনতাইয়ের ঘটনায় জরিমানার পাশাপাশি সর্বাধিক তিন বছরের জেল।
## তদন্তের সময় পুলিস যে বয়ান নথিভুক্ত করে সেটিকে তদন্তকারী সংস্থা চাইলে বিচার প্রক্রিয়ায় প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।।
উল্লেখ্য, নতুন আইন বলবৎ হওয়ার দিন কলকাতা হাইকোর্টে কেউ বিরোধিতা করছেন কেউ অংশ নিচ্ছেন। বার কাউন্সিলের ডাকে কিছু আইনজীবী কাজে অংশ নিচ্ছেন না। তবে কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, যদি কোনও আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কোন কড়া পদক্ষেপ বা ডিসিপ্লিনারি একশন নিতে পারবে না বার কাউন্সিল।।
নতুন তিন আইন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী শেখর বসুর তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, আইন যখন তৈরি হয় তার একটা একাডেমিক দিক থাকে। আইনের একাডেমিক দিক আর সেই আইনের বাস্তবায়ন দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। আজ থেকে নতুন আইনের প্রণয়নের সূচনা হল। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে কতটা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে বা বাস্তবায়ন কতটা সহজ হচ্ছে এটা সময় বলবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)