জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নিউ টাউনে অপারেশন করে সীমান্ত পার করে দেশে ফিরে গিয়েছিল বাংলাদেশের এমপি আনোারুল আজিমের খুন মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল গাজি। তারা লুকিয়ে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির একটি জঙ্গলে। সেখানে তারা পাতাল কালী মন্দিরে আশ্রয় নেয় হিন্দু সেজে। পরিচয় দেয় পলাশ রায় ও শিমুল রায় হিসবে।
আরও পড়ুন-নিজের সন্তানই বাজারের ব্যাগে! বিরাটিকাণ্ডের নেপথ্যে মর্মান্তিক কাহিনি…
বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল চট্টোগ্রামের ওই মন্দিরে দুইজন কালীভক্ত ঢুকেছে। সেই খবরের উপরে ভিত্তি করে অভিযান চালানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন আর রশিদ মন্দিরে আশ্রয় পেতে তারা হিন্দু নাম ধারণ করেন। স্থানীয়দের কাছে তারা বলতেন কালী মাতার কাছে থাকতে তাদের ভালো লাগে। তাই তারা মন্দির ছেড়ে কোথাও যাবেন না। সীতাকুণ্ডের একটি পাহাড়ের নিচে ‘পাতাল কালী মন্দির’ রয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা পলাশ রায় ও শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে দুজনেই কালী মন্দিরে থাকতেন। তারা রাতেও সেখানেই থাকতেন। বলতেন, আমরা মাকে বেশি ভালোবাসি, তাই মায়ের পাশেই থাকতে চাই। ওই খবরের উপরে ভিত্তি করে অভিযান চালায় পুলিস। অন্যদিকে আকাশে কপ্টার উড়িয়ে পুলিস পৌঁছে দেওয়া হয় পাহাড়ি এলাকায়। শেষপর্যন্ত তাদের ধরে ফলে পুলিস।
হারুন আর রশিদ বলেন, মোস্তাফিজ এবং ফয়সাল মিশন সম্পন্ন করে ১৯ তারিখ দেশে ফিরে আসে। তারপর আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহিনের সঙ্গে কথা বলে। শাহিন তাদের খরচের জন্য ৩০ হাজার টাকা দেন। এই টাকা নিয়ে তারা এখানে পাহাড়ে চলে যায়। কেননা আগে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করায় জায়গাগুলো তাদের চেনা ছিল। ফলে তারা পাতাল কালী মন্দিরে এসে থাকত এবং ঘুমাত।
এমপি আনার হত্যায় ধৃদের ভূমিকা সম্পর্কে হারুন বলেন, এমপি আনারকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করেছিলেন ফয়সাল গাজী। পরে আনারকে চেয়ারে বেঁধে বিবস্ত্র করেন মোস্তাফিজ। পরে আনারের মৃত্যু নিশ্চিত করে শিমুল ভূঁইয়া ও তার সহযোগীরা। আজকে গ্রেফতারের পরপরই মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এছাড়া গ্রেফতার আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান ঢাকা মহানগর পুলিসের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে-নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এরপরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিসের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল গত ২ মে কলকাতায় আসে। তারা দেশে ফিরে আসে ১৯ মে। এই দুজনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ডিবি। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়ার বাড়িও একই এলাকায়। সূত্রের খবর, আনার হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫ আসামি পলাতক। তারা হল-এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী ও মো জামাল হোসেন।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)