Bangladesh: ইউনূস জমানায় বাড়ছে অবিশ্বাস, বহুদেশেই ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা…

সেলিম রেজা, ঢাকা: গত কয়েক বছর বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছিল ভিয়েতনাম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ঘুরতে গিয়ে বাংলাদেশিদের কেউ কেউ প্রতিবেশী কম্বোডিয়া বা লাওসেও যেতেন। তবে ভিয়েতনামে পর্যটক হিসেবে ঘুরতে যাওয়া বাংলাদেশিদের অনেকে আর বাংলাদেশে ফেরেননি। 

কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে তাদের অনেকেই অবৈধ পথে ভিন্ন গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছেন; আবার কেউ সেখানেই ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ছোটখাটো কাজে যুক্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে ভিয়েতনাম।

আরও পড়ুন-Boycott Turkey Azerbaijan: পাকিস্তানকে রসদ জুগিয়ে বিপন্ন তুর্কিয়ে-আজ়ারবাইজান! বয়কটের পথে ভারত, ট্যুর বাতিল করছে সবাই…

যদিও কয়েক বছর আগেও ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় যেতে বাংলাদেশিদের কোনো ভিসার প্রয়োজন হতো না। এক্ষেত্রে অন অ্যারাইভাল ভিসা বা ইমিগ্রেশন অ্যাপ্রুভাল নিয়েই দেশ দুটি ভ্রমণ করা যেতো। বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা অনুমোদনে নানা শর্ত ও জটিলতা বাড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও। এ তিন দেশের অনেক ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। যারা বেশ কয়েকবার এসব দেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের ভিসা আবেদনও অনুমোদন হচ্ছে না। বাংলাদেশিদের ভিসা ইস্যুর জন্য নতুন অনেক শর্তও জুড়ে দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও অভিবাসী শ্রমিকের পাশাপাশি পর্যটন ভিসাও বন্ধ করে দেয় দেশটি। সম্প্রতি বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে আমিরাত। তবে এক্ষেত্রে দিনে ভিসা দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০টি।

মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের ভ্রমণের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ছিল ভারত। প্রতিবেশী দেশ ভারত ঘুরতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি স্থলপথে নেপাল ও ভুটান ভ্রমণেও যেতেন। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট এ দুটি দেশে ভ্রমণ করতে বাংলাদেশিদের ভিসার প্রয়োজন হয় না। অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়েই বাংলাদেশিদের নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের পক্ষ থেকে ভিসা ইস্যু প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে বৈধ পথে বাংলাদেশীদের ভারত যাত্রা বন্ধ রয়েছে। ভারতের ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশীদের নেপাল ও ভুটান ভ্রমণও সীমিত হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন- Anushka sharma on Virat Kohili Retirement: ‘তোমার চোখের জল ওরা দেখেনি! কেড়ে নিয়েছে অনেককিছু’, বিরাটের অবসরে আবেগে ভাসলেন অনুষ্কা…

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করে পাকিস্তান। ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা এগিয়েছিল। বাংলাদেশী পর্যটকদের অনেকে পাকিস্তানে যেতে আগ্রহীও হয়েছিলেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ ও পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশীদের সে আগ্রহেও ভাটা পড়ছে।

অভিবাসন ও পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা না বেড়ে উল্টো কমছে। আন্তর্জাতিক সূচকে (হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স) বাংলাদেশী পাসপোর্টের অবস্থান এখন উত্তর কোরিয়া কিংবা লিবিয়ার পর্যায়ে। এ কারণে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসার শর্ত ও জটিলতা বাড়ছে। গত কয়েক বছর পর্যটক হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশী আর ফেরেননি। অবৈধভাবে তারা গন্তব্যের দেশে থেকে গেছেন কিংবা চোরাই পথে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছেন। এসব কারণে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ হচ্ছে কিংবা জটিলতা বাড়ছে।

বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশীদের অবৈধ বিদেশ যাত্রা থামবে না বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাবেক পরিচালক ও ম্যানপাওয়ার ব্যাবসায়ী এস এম জিল্লুর রহমান আজাদ। জি ২৪ ঘন্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তরুণরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থান না হলে তারা যেকোনো উপায়ে বিদেশ পাড়ি দিতে চাইবে, এটিই স্বাভাবিক। পর্যটক হিসেবে গিয়ে কাজ করা কিংবা অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার কারণেই বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু নিয়ে জটিলতা ও নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে। আর বিদেশে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতাও কমছে।’
ম্যানপাওয়ার ব্যাবসায়ী এস এম জিল্লুর রহমান আজাদ আরো বলেন, ‘প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে, বাংলাদেশে তাদের সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন। আমরা ধরেই নিচ্ছি কিছু মানুষ বিদেশ চলে যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের এটি দেখা দরকার যে বিদেশগামী অভিবাসী শ্রমিকরা যেন শিক্ষিত ও দক্ষ হয়। আর ভুয়া ভিসা কিংবা ভুয়া তথ্য দিয়ে কেউ যেন বিদেশ যেতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

আরও পড়ুন- Javed Akhtar statement: ‘আয়কর হানা হবে, কেস আবার খুলবে, তাই সব চুপ’, নাম না করে শাহরুখ-সলমানকে তোপ জাভেদের!

প্রতি বছর বিশ্বের ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট ও ২২৭টি ভ্রমণ গন্তব্য নিয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচক প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত সর্বশেষ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে বাংলাদেশী পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ৯৫তম। বাংলাদেশের ওপরে ৯৪তম স্থানে আছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা উত্তর কোরিয়া। আর বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে একই অবস্থানে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার নাম।

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশীদের গন্তব্য সীমিত হয়ে আসার বিষয়ে বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও সমস্যার কারণে কিছু দেশ বাংলাদেশীদের ভিসা দিচ্ছে না কিংবা ভিসা প্রক্রিয়া জটিল করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে।

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

Source link