জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দেশের কমলা লেবুর শহরে নতুন ইতিহাস! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী নীতীন গডকরি (Nitin Gadkari) এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ( Devendra Fadnavis) নাগপুরের মিহানে এশিয়ার বৃহত্তম কমলা প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা যুক্ত পতঞ্জলি মেগা ফুড অ্যান্ড হার্বাল পার্কের (Patanjali Mega Food and Herbal Park) উদ্বোধন করলেন। এশিয়ার প্রথম এবং ভারতের বৃহত্তম খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এবার এই দেশেই
ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফড়নবিশ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন যে, রাজ্যে পতঞ্জলির পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ নীতিন গডকরি, স্বামী রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণের স্বপ্ন এখন এক বিশাল আকারে বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সুবিধা প্রতিষ্ঠার পথে অনেক বাধা ও চ্যালেঞ্জ এসেছিল, কিন্তু রামদেব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে যতই অসুবিধা আসুক না কেন, এই স্বপ্ন পূরণ হবেই। আজ, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। পতঞ্জলির প্রাথমিক লক্ষ্য কৃষকদের সমৃদ্ধি। ফড়নবিশ আরও বলেন যে, আচার্য বালকৃষ্ণের সঙ্গে আলোচনা অনুসারে, নাগপুরের মিহানে সকল কমলা প্রক্রিয়াকরণের জন্য কেন্দ্রীয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে পতঞ্জলি মেগা ফুড অ্যান্ড হার্বাল পার্ক। কমলা বাছাই এবং গ্রেডিংয়ের পাশাপাশি কৃষকদের হিমাগারের সুবিধাও দেওয়া হবে। কৃষকরা যতদিন প্রয়োজন ততদিন এখানে তাঁদের কমলা সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং যখনই উপযুক্ত বাজার মূল্য পাবেন তখনই বিক্রি করবেন। তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন যে, এই কেন্দ্র কমলা উৎপাদনকারী কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ হবে। মহারাষ্ট্র সরকার এবং পতঞ্জলি একের পর এক প্রতিশ্রুতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে এবং আগামী দিনে, এই ফুড পার্ক অঞ্চলের সকল কৃষকদের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরি করবে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, মহারাষ্ট্র সরকার পতঞ্জলির এই মহৎ উদ্যোগের জন্য সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান করবে।
রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণকে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান গড়করি। তিনি বলেন ফড়নবিশের এবং তাঁর অনুরোধেই নাগপুরের মিহানে এই ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করা হয়। ফড়নবিশের মতে রামদেবের উদ্যোগ মহারাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পতঞ্জলি ফুড পার্ক উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জনের রাস্তা করে দেওয়ার পাশাশি যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে। স্বামী রামদেবের অবদানের প্রশংসা করেন, গডকরি জোর দিয়ে বলেন যে রামদেবের দৃষ্টিভঙ্গি এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অংশের উন্নয়নের নতুন পথ খুলে দেবে। শ্রী গডকরি বিদর্ভের কৃষি সংকটের কথাও তুলে ধরেন, যেখানে আর্থিক সংকট এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্যের অভাবে ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। গডকরি বলেন রামদেবের এই মেগা ফুড পার্ক এই অঞ্চলের কৃষকদের নতুন আশা জাগিয়েছে। আগে, ছোট আকারের কমলা প্রতি কেজি ১২ টাকায় বিক্রি হত, কিন্তু পতঞ্জলি এখন ১৮ টাকায় প্রতি কেজি কমলা ক্রয়ের আশ্বাস দিয়েছে, যা কৃষকদের জন্য আরও ভালো আয় নিশ্চিত করবে। দৈনিক ৮০০ টন কমলার চাহিদা থাকায়, কৃষকরা তাদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, অ্যাগ্রো ভিশন কমলা, লেবু, মিষ্টি লেবু এবং অন্যান্য টক জাতীয় ফলের উৎপাদন বাড়ানোর উপায় নিয়েও কাজ করছে। বর্তমানে নাগপুরে প্রতি একরে ৪-৫ টন কমলা উৎপাদন হয় এবং লক্ষ্য হল প্রতি একরে এই ফলন ২৫-৩০ টন বৃদ্ধি করা। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে সরকার এবং পতঞ্জলির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বিদর্ভের কৃষকরা আর দুর্দশা এবং আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হবে না।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখতে ফলো করুন Google News
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রামদেব, নাগপুরকে কেবল দেশের একটি আদর্শ মহানগর হিসেবেই দেখেন না। বরং ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, শিল্প, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অতুলনীয় কেন্দ্র হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে রাজনৈতিক ভাবে অনুকরণীয় চরিত্রের দুই কেন্দ্রীয় নেতা -ফড়নবিশ এবং গড়করিও এখানকার মানুষ। রামদেব বলেন যে, পতঞ্জলি নাগপুরে এশিয়ার বৃহত্তম কমলা প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে, যার বিনিয়োগ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা এবং আরও ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্ল্যান্ট দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত। রামদেব জোর দিয়ে বলেন যে, কমলার রস একটি শক্তিশালী বার্ধক্য বিরোধী পানীয়! যা বার্ধক্য প্রক্রিয়া মন্থর করতে সাহায্য করে। রামদেব জানান যে, বর্তমানে বাজারে যা যা ফলের রস (কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, মিশ্র ফল ও আপেলের রস) পাওয়া যায়, তার মাত্র ১০% আসল রস, ৪০% চিনি এবং বাকিটা মিশ্রিত জল। উল্টোদিকে নাগপুর এখন গোটা দেশ এবং বিশ্বকে ১০০% বিশুদ্ধ কমলার রস দেবে। যা হবে কীটনাশক-মুক্ত, প্রিজারভেটিভ-মুক্ত এবং চিনি-মুক্ত। এই কারখানার দৈনিক প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা ৮০০ টন। যা কৃষকদের সমৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। স্বামী রামদেব এই উদ্যোগকে ঋষি-কৃষি বিপ্লবের সূচনা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
অনুষ্ঠানে আচার্য বালকৃষ্ণ বলেন যে, পতঞ্জলি খাদ্য ও ভেষজ উদ্যানের বাস্তবায়ন তিনজন মহান ব্যক্তিত্বের অসাধারণ অবদানের ফল। তিনি বলেছেন এই পূজনীয় স্বামীজি মহারাজের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির ফসল। পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশের গভীর সংবেদনশীলতা এবং অঙ্গীকার রয়েছে এখানে। এছাড়াও বিদর্ভের কৃষকদের উন্নয়নের জন্য অটল দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী কোনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছাড়াই গড়করির নিরলস নিষ্ঠাকে তিনি কুর্নিশ জানিয়েছেন।রামদেব এবং পতঞ্জলি সকলকে ক্ষমতায়নের কথাই বলে। সকলকে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং স্বদেশীর মাধ্যমে স্বনির্ভরতা প্রচারের স্বপ্ন দেখেন। যখন যোগী এবং ঋষি মিলেই লিখবেন ইতিহাস…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)