নিবেদিতা হাজরা, লস অ্যাঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মনে হচ্ছে এ যেন কোনও হলিউড হরর মুভির হাড়হিম করা ভয়াবহ সেট কিংবা কোনো যুদ্ধক্ষেত্র, চারিদিকে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন, আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ধোঁয়া, রাস্তার ধারে ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে রয়েছে হাজারো গাড়ি আর পুড়ে ছাই কোটি কোটি টাকার বাড়ি। আমি এই লেখা লিখছি লস অ্যাঞ্জেলেসের সান্তা ক্লারিটা নামের একটি শহর থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা বিদুৎহীন, ইন্টারনেট পরিষেবা হীন থাকার পর । এই শহরের সবচেয়ে কাছের দাবানল টি হল হার্স্ট ফায়ার, এখনও অবধি ৭৭০ একর জমি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই আগুন। ওদিকে আবার কোথাও শহর জ্বলছে কেনেথ ফায়ার নামক দাবানল কিংবা ইটন ফায়ার নামক দাবানলের বিধ্বংসী আগুনে। তবে সবথেকে দানবিক আগুন টি লেগেছে লস অ্যাঞ্জেলসের একটি অতন্ত্য দামি বিত্তবান এলাকায় যার নাম প্যাসিফিক প্যালিসেডস, পুরো এলাকাই আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। এই এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় কয়েক কোটি টাকার উপরে। পৃথিবী বিখ্যাত হলিউড হিলস, ম্যালিবু’র মতো অতি নামিদামি জায়গাগুলিও আগুনের গ্রাসে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হলিউডের নামকরা তারকারা, প্রায় সবাই আজ এই বিধ্বংসী আগুনে সর্বহারা। ঘর ছাড়া হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর দিকে আজই ধেয়ে আসছে বিশালাকার দুই গ্রহাণু! খুব শীঘ্রই ধ্বংসের মুখে মানবসমাজ!
বাড়ি মানে তো শুধু টাকার ক্যালকুলেশন নয়, একটা বাড়ির প্রতিটি কোণে লুকিয়ে থাকে অনেক যত্ন, অনেক স্মৃতি, অনেক ছেড়ে যাওয়া মানুষের স্পর্শের গন্ধ, আজ পুড়ে সব ছাই। আমাদের মতো ইমিগ্র্যান্টরা যারা রুটিরুজির তাগিদে এই দেশে এসেছি তাদের সারাক্ষণই বেঁচে থাকতে হয় হাজার প্রতিকূলতা, হাজার লড়াই এর মধ্যে দিয়ে, তো আমরা যারা লস অ্যাঞ্জেলেস কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেস-এর পাশের শহর গুলিতে থাকি জীবনধারণের তাগিদে, তাদের তো আরও শিরে সংক্রান্তি অবস্থা এই ভয়াবহ পরিবেশে । সবকিছু হারানোর ভয়, আবার শূন্য থেকে লড়াই করার ভয়। তবে খারাপ সময় মানুষকে অনেক কিছু শেখায় । দেখলাম এই খারাপ সময়ে বাবা-মা-আত্মীয় পরিজন হীন দেশে মানুষের পাশে মানুষ কে দাঁড়াতে, সহানুভূতিশীল হতে ।
আরও পড়ুন: বিধ্বংসী দাবানলে জ্বলছে লস অ্যাঞ্জেলস! থমকে হলিউড, ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ! মৃত ৫…
তবে এই বিধ্বংসী আগুন সাধারণ মানুষের কাছে আরও অনেক প্রশ্ন চিহ্ন তুলেছে। প্রকৃতি বিরূপ হলে মানুষের সত্যি কিছু করার থাকেনা, কিন্তু পৃথিবীর একটি প্রথম শ্রেণীর দেশে থেকে সাধারণ মানুষ কি সরকারের থেকে আরও কি একটু বেশি ব্যাক আপ প্ল্যান আশা করতে পারেনা ? সাধারণত ডিসেম্বর থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় নিয়মিত, কিন্তু জলবায়ুর আচমকা এই পরিবর্তন প্রশ্নচিহ্ন তুলছে প্রকৃতির প্রতি, পৃথিবীর জলবায়ুর প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধের দিকে। আজ প্রায় তিন দিন হয়ে গেলো বিধ্বংসী আগুন এখনও থামেনি, কিছু নতুন দাবানলের খবর আসছে, এলাকার প্রায় সকলেই আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাড়িতে রেখেছি, যেকোনো মুহুর্তে ঘর ছাড়ার অর্ডার আসার অপেক্ষায় দিন গুনছি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)