অয়ন ঘোষাল: ১৯ জুলাই থেকে ১২ নভেম্বর। ১১৭ দিন ধরে বেনজির ভাবে ভারত-বাংলাদেশ ট্রেন চলাচল বন্ধ। উত্তাল বাংলাদেশ। অশান্তি। সংঘর্ষ। পালাবদল। তবে তারপরে ধাপে ধাপে ফিরছে স্থিতি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস পরিষেবা কিছুদিন বন্ধ থাকার পর তা-ও সচল হয়েছে। কলকাতা বা দিল্লির সঙ্গে আকাশপথে পুনর্বহাল গিয়েছে ঢাকা বিমানবন্দরের যোগযোগ। এমনকি মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার পুজোর আগে ইলিশও পাঠিয়েছে ভারতে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দু’দেশের রেল যোগাযোগ পরিষেবা এখনও স্তব্ধ!
আরও পড়ুন: Earthquake in Darjeeling: কেঁপে উঠল দার্জিলিং-কার্শিয়ং! পায়ের তলার পাহাড় কেঁপে উঠতেই আতঙ্কে পর্যটকেরা…
১৯ জুলাই থেকে বন্ধ কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস। ২০ জুলাই থেকে বন্ধ কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেস। বাংলাদেশ রেলওয়েজের অনুরোধে জুলাই মাসে ট্রেন বন্ধ হয়েছিল। নভেম্বরের প্রায় মাঝামাঝি গড়িয়ে গেলেও নতুন কোনো আপডেট নেই। এদিকে অসুবিধায় পড়েছেন দুই দেশের সাধারণ নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষ, যাঁদের চাইলেই বিমানে সফর করার সঙ্গতি নেই। এদিকে বাসযাত্রা রোগীদের ক্ষেত্রে কষ্টকর।
অথচ প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ ট্রেনে কলকাতায় আসতেন এই শহরের বেসরকারি হাসপাতালে উন্নততর চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার লক্ষ্যে। সমান্তরাল এক ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজম’ তৈরি হয়ে উঠেছিল ইস্টার্ন বাইপাস-লাগোয়া একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল জুড়ে।
কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল রেলের আর্থিক ক্ষতি। কলকাতা টার্মিনালে ইমিগ্রেশন কাউন্টার স্ক্যানার-সহ সমস্ত পরিকাঠামো মাসের পর মাস পড়ে রয়েছে। অথচ বন্ধন এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস খাতে ট্রেন পিছু ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় লক্ষ টাকার টিকিটের দাম প্রতিদিন ফেরত দিয়ে চলেছে রেল।
এই দেশে কলকাতা স্টেশন থেকে দুটি ট্রেনের অপারেটিং ইনচার্জ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানাচ্ছেন, একা ভারতীয় রেল বোর্ড ইচ্ছা করলেই এই ট্রেন দুটি চালাতে পারে না। কারণ, প্রথমত, ট্রেন দুটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে। দ্বিতীয়ত, ট্রেনের রেক দুটি ভারতীয় রেলের সম্পত্তি হলেও খুলনা বা ঢাকা থেকে ট্রেন যখন সীমান্ত পর্যন্ত আসে, তখন তাতে ডিউটি করেন বাংলাদেশ রেলওয়েজের কর্মীরা। ফলে যৌথ সম্মতি ছাড়া এই ট্রেনের অপারেশন সম্ভব নয়।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেও সমঝোতা এক্সপ্রেস চালানো হয়েছে একাধিকবার। অনেকবার সেই পরিষেবা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের টানাপড়েনে বন্ধ হয়েছে বা আবার চালু হয়েছে। কিন্তু প্রতিবার চালু হওয়া বা বন্ধ হওয়ার আগাম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছিল। কিন্তু বন্ধন এবং মৈত্রী ব্যতিক্রম। আনুষ্ঠানিক ভাবে, অর্থাৎ, সরকারি খাতায়-কলমে ট্রেন দুটি এখনও চালু আছে। ফলে প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশের উপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। তারপর ওপার থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে অমুক তারিখের পরিষেবা বন্ধ ঘোষণা হোক।
আরও পড়ুন: Bengal Weather Update: এবার পরিষ্কার হয়ে গেল ঠিক কবে থেকে শীত পড়ছে বাংলায়…
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র আরও জানাচ্ছেন, কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৫ দিন পরিষেবা দেয়; সোম, মঙ্গল, বুধ, শুক্র এবং শনি। কলকাতা-খুলনা বন্ধন সপ্তাহে ২ দিন পরিষেবা দেয়; রবি এবং বৃহস্পতি। শুধু ট্রেনের সংখ্যা গুনলে আজকের তারিখ পর্যন্ত ১১২টি ট্রেনের সমস্ত যাত্রীর টিকিটের টাকা ফেরত দিয়েছে পূর্ব রেল।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)