সেলিম রেজা, ঢাকা: আধ্যাত্মিক বাউল সাধক ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও মেলা বসেছে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ৩ দিন চলবে এই মেলা। আয়োজক, লালন একাডেমি। সহযোগিতায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: Bangladesh: বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ইলিশ শিকার! নৌবাহিনীর হাতে আটক ৩১ ভারতীয় মত্স্যজীবী
মেলা উপলক্ষে আখড়াবাড়ি হাজারো ভক্ত-অনুসারীর মিলনমেলায় রূপ নেয়। এক সপ্তাহ আগে থেকে আসতে শুরু করে ভক্তেরা। কালি নদীর পাড়ঘেঁষে লালন মাঠে শতাধিক অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসেছে। সঙ্গে ভক্ত-অনুসারীদের খণ্ড খণ্ড দলও। সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। গুরু-শিষ্য, ভক্ত-অনুসারী আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর প্রাঙ্গণ। মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করছে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ। দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন ভক্তরা। দিনরাত গান ছাড়াও তাঁরা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে-অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন। লালন মেলায় কালি নদীর পাড়ের মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। আশপাশের এলাকায়ও হরেক রকমের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ লালন একাডেমির বাউল শিল্পীরা বলেন, ‘লালনের উৎসব এর আগে বন্ধ থাকায় সাধু-গুরুরা হতাশায় ভুগছিলেন। এবার লালনের তিরোধান দিবস পালন হবে। এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করার। যতদিন বেঁচে থাকবো সাঁইজির কথা শুনিয়ে যাব’। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শারমিন আখতার বলেন, ‘বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে আলোচনা সভা শুরু হচ্ছে। আলোচনা শেষে শুরু হচ্ছে লালন সংগীত। মেলার ও মাজার প্রাঙ্গণ তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে’।
লালন একাডেমির কয়েকজন সদস্য জানালেন, ‘লালন ফকির দীর্ঘ সময় ধরে তার নিজস্ব আত্মদর্শনের আলোকে ভক্ত ও শিষ্যদের নিয়ে যেসব উৎসবমুখর কর্মকাণ্ড করতেন তারই ধারাবাহিকতায় পয়লা কার্তিক সাঁইজির তিরোধান দিবস পালন করতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্ত-শিষ্য-অনুসারীরা ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মিলিত হন। বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে যেন পা ফেলার জায়গা থাকে না। এবারও লালন মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাজারো ভক্তরা এসেছেন। সাধু ভক্তদের এই মিলন মেলায় লালনের রেখে যাওয়া মানবমুক্তির আধ্যাত্মিক বাণী সম্বলিত গান গাওয়া হয়। লালন শাহের গান শুনতে ও এখানে ঘুরতে জড়ো হচ্ছেন অসংখ্য দর্শনার্থীরা’।
১৮৯০ সালের ১ কার্তিক শিল্পী লালন সাঁই বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে দেহধাম ত্যাগ করেন। এরপর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তার ভক্ত-অনুসারীরা তাদের সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। পরে বাংলাদেশ লালন একাডেমি এ আয়োজনের দায়িত্ব নেয়।
আরও পড়ুন: Joy Bangla: হচ্ছেটা কী! বদলের বাংলায় এবার ‘জয় বাংলা’ বললেই কানের গোড়ায়…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)