জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ‘যোগীকে পাঠান, উনি এক মিনিটে ঠান্ডা করে দেবেন ফ্রান্স’– প্রায় এই সুরেই কথা বললেন এক ব্যক্তি। কোনও গোঁড়া বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদী বা নিদেনপক্ষে কোনও যোগীভক্ত বলে ভাবছেন তা? না, মোটেই তা নয়। এই মর্মে কথাটা বলেছেন জার্মানির এক অধ্যাপক। ঠিক ‘বলেছেন’ বললে ভুল হয়, তিনি ট্যুইট করেছেন। ট্যুইটে এই প্রফেসর লিখেছেন– ‘ইন্ডিয়া মাস্ট সেন্ড যোগী আদিত্যনাথ টু ফ্রান্স টু কন্ট্রোল রায়টস সিচুয়েশন দেয়ার অ্যান্ড মাই গড, হি উইল ডু ইট উইদিন 24 আওয়ার্স!’
আরও পড়ুন: Kenya: বাসের উপর উঠে পড়ল ট্রাক! ভয়ংকর পথদুর্ঘটনায় মৃত ৪৮, দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে বাস-বাইক…
খোদ আদিত্যনাথের অফিসও এই ট্যুইটে সাড়া দিয়েছে। ইউপি সিএম অফিস থেকে করা ট্যুইটে লেখা হয়েছে, ‘হোয়েনেভার … ল্য অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন অ্যারাইজেস ইন এনি পার্ট অফ দ্য গ্লোব, দ্য ওয়ার্ল্ড… ইয়ার্নস ফর দ্য ট্রান্সফরমেটিভ ”যোগী মডেল” অফ ল্য অ্যান্ড অর্ডার’!
ফ্রান্সে ক্রমশ বাড়ছে বিক্ষোভের আগুন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিসের ব্যাপক সংঘর্ষে উত্তরোত্তর বাড়ছে এই আগুন। এই আগুন নেভাতে দেশ জুড়ে ৪৫ হাজার পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় ৯০০ বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছে। ফ্রান্সের এই অশান্তিতে এখনও পর্যন্ত ৫০০টি বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০০-এরও বেশি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪০০০টিরও বেশি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গিয়েছে।
কেন এই আগুন? ঘটনার সূত্রপাত পুলিসের গুলিতে ১৭ বছরের এক কিশোরের মৃত্যুতে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে উত্তপ্ত ফ্রান্স, চারদিন ধরে ফ্রান্স জুড়ে দফায় দফায় অশান্তি, সংঘর্ষ, অগ্নিকাণ্ড, গোলাগুলি চলার ঘটনা। কেন ওই কিশোরকে গুলি করল পুলিস? প্যারিসের উপকণ্ঠে রয়েছে নানতের নামের এক মফসসল শহর। সেখানে মায়ের সঙ্গে থাকত আলজেরিয়ার বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের ওই ছেলেটি, যার নাম নাহেল। মঙ্গলবার ট্রাফিক স্টপে তার গাড়ি আটকায় পুলিস। সেই সময়ে পথচলতি এক ব্যক্তি গোটা ঘটনাটা ভিডিয়ো রেকর্ড করেন। তাতে দেখা গিয়েছে, গাড়িটি থামিয়ে দুই পুলিস অফিসার মাথা ঝুঁকিয়ে কথা বলছেন। একজনের হাতে রয়েছে পিস্তল। তার পর হঠাৎই ওই অফিসার গুলি করেন নাহেলকে। পুলিস অফিসারের দাবি, তাঁর আশঙ্কা ছিল, ছেলেটি পালানোর চেষ্টা করছে, আর সেটা করতে গিয়ে তাকে এত জোরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে হত যে, তাতে যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত! অন্য লোকের প্রাণ চলে যেতে পারত! ‘অন্যের প্রাণ চলে যেতে পারত’ এই আশঙ্কায় তিনি তরতাজা এক কিশোরের প্রাণ কেড়ে নিলেন? স্বাভাবিকভাবেই তাই ওই পুলিস অফিসারের যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি অনেকের। ফ্রান্সের পুলিস তাঁকে আটক করে খুনের মামলার তদন্তও শুরু করেছে। কিন্তু জনরোষ তাতে বাগ মানেনি।
এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করে ফ্রান্সে। ‘দ্য পুলিস কিলস’ স্লোগান তুলে শয়ে শয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, জাতিগত পক্ষপাতে বরাবরই আক্রান্ত ফরাসি পুলিস। আলজেরিয়া, মরক্কো থেকে আসা ফ্রান্সের উদ্বাস্তু, ফরাসি মুসলমানদের সঙ্গে এরকমই বৈষম্যমূলক আচরণ করে তারা। তাই তাঁদের ক্ষোভ নির্বাপিত হচ্ছে না। সমাজকর্মীদের মতে, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাদা চামড়ার ফরাসি নাগরিকদের তুলনায় আলজেরিয়া, মরক্কো থেকে আসা উদ্বাস্তু বা কৃষ্ণাঙ্গ ফরাসিদের প্রতি পুলিসের আচরণ বৈষম্যমূলক। কৃষ্ণাঙ্গ বা আরবীয়দের উপর অনেক বেশি অত্যাচারী ফরাসি পুলিস। এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে রাগ ছিলই। নাহেলের মৃত্যু সেই রাগের আগুন উসকে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: Bangladesh: ভারতের লঙ্কায় ভয়ংকর ঝাল লেগে গেল বাংলাদেশের! কীভাবে?
বিক্ষোভ এমন সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে যে, প্রথম দিকে দিশেহারা ছিল ফরাসি পুলিস। দেশ জুড়ে অন্তত চল্লিশ হাজার পুলিস নামানো হয়েছিল পরিস্থিতি দমনে। প্রাথমিক ভাবে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করা হয়। আহত অন্তত ২০০ পুলিস অফিসার। অশান্তির খবর পেয়েই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সামিট ছেড়ে চলে এসেছিলেন ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইম্যান্যুয়েল ম্যাক্রঁ। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি বৈঠকেও বসেন তিনি।