সেলিম রেজা, ঢাকা: বাংলাদেশে আবারো বাড়ছে করোনা ভাইরাস!
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চিহ্নিত হচ্ছে ভাইরাসটির নতুন নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দরে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশে ৭টি নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
দেশে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় জটিল রোগে আক্রান্ত, গর্ভবতী নারী এবং কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে–এমন ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে এখন ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ টিকা আছে। এই টিকাই আপাতত দেওয়া হবে। “এখনও যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যে ডিফারেন্ট কনট্যাক্ট পার্সনের সঙ্গে কাজ করে, গর্ভবতী নারী এবং যারা ইমিউনো কম্প্রোমাইজড, তাদের টিকা নেতে হবে। পুরোনো যারা এরইমধ্যে টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা ষাটোর্ধ্ব, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে, কোমর্বিডিটি আছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরও ছয় মাস পর আরেকটা ডোজ দেওয়া উচিত।”
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর:
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতার কথা জানান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে বাংলাদেশের সব স্থল, নৌ, বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কসমূহে নজরদারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Meghalaya Missing Couple: ‘পারলে আমিই ওকে ফাঁসিতে ঝোলাব!’, ‘স্বামীহন্তা’ সোনমের ভাই গোবিন্দ ফুঁসছে রাগে…
এসময় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ৭ নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন (কনুই বা টিস্যু ব্যবহার করে)।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
৫. সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
সাবধানতা:
সংবাদ সম্মেলনে করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতির বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, করোনা শনাক্তে আবারও আরটি-পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার টিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও এইচডিইউ সুবিধাসহ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম যেমন—কেএন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এসব প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী:
এদিকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালার (আইএইচআর) আওতায় পরিচালিত ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Meghalaya Honeymoon Case: অপারেশন হানিমুনে অবশেষে ভাঙল সোনম! ‘হ্যাঁ, আমিই খুন করেছি রাজাকে…’
কোভিড ভেরিয়েন্ট:
উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ভাইরাসের মতোই করোনাভাইরাস মিউটেশন করে প্রতিনিয়ত তার রূপ পাল্টাচ্ছে। আর এর ফলে নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্প্রতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) NB.1.8.1 নামক একটি নতুন কোভিড ভেরিয়েন্টকে ‘ভেরিয়েন্ট আন্ডার মনিটরিং’ (VUM) হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটা প্রথম শনাক্ত হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে। বর্তমানে ২০টিরও বেশি দেশে শনাক্ত (UK, USA, China, India, Thailand এবং অন্যান্য) শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারত এবং আশেপাশের দেশগুলোয় অমিক্রনের কয়েকটা সাব-ভেরিয়েন্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। JN.1—BA.2.86 থেকে উদ্ভূত, শক্তিশালী সংক্রমণ ক্ষমতা আছে। হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, সর্দি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি ও হজম সমস্যা দেখা যায়। XFG, XFC, LF.7—এগুলোও JN.1-এর উপধরন শ্রেণির সাব-ভেরিয়েন্ট যা বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে XFG ও XFC বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা যুক্ত।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)