জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রায় প্রতি বছরই নোবেল প্রাইজের শর্টলিস্টে তাঁর নাম উঠত, কিন্তু কোনও বছরই তা আর পাওয়া হয়ে উঠল না তাঁর। তিনি এ কালের কাফকা। বিশ্ববিশ্রুত কথাকার মিলান কুন্দেরা নোবেল প্রাইজকে যেন খানিকাট ঠাট্টা করেই প্রয়াত হলেন ৯৪ বছর বয়সে। চেক প্রজাতন্ত্রের মোরাভিয়ান লাইব্রেরি আজ, বুধবার তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানায়। কুন্দেরার ব্যক্তিগত সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মোরাভিয়ান লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরির মুখপাত্র আনা ম্রাজোভা বলেছেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে কুন্দেরা গতকাল প্যারিসে মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Supermassive Black Hole: অসম্ভব দূরত্বে অকল্পনীয় বিশালত্বের এক ব্ল্যাক হোল! গিলে নেবে নাকি পৃথিবীটাকে?
১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল চেকোস্লোভাকিয়ায় জন্ম কুন্দেরার। তাঁর বাবা ছিলেন সংগীতজ্ঞ। বাবার সাহচর্যেই কলাশিল্পের জগতে তাঁর প্রবেশ। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জোক’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। সেখানে তৎকালীন চেকোস্লোভাক কমিউনিস্ট শাসনের রূঢ় ছবি তুলে ধরেন তিনি। ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের সমালোচনা করার জন্য তাঁকে একঘরে করা হয়। ১৯৭৫ সালে ফ্রান্সে পাড়ি জমান তিনি।
১৯৮৪ সালে ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে বিশ্ব-সাহিত্যমহলে আলোড়ন পড়ে যায় তাঁকে ও তাঁর লেখা নিয়ে। ১৯৮৮ সালে তাঁর এই উপন্যাস নিয়ে হলিউড ছবিও বানায়।
তাঁর লেখা যেন একটু তির্যক ভাবে জীবনের দিকে তাকানো। তাঁর ‘ইমমর্টালিটি’, ‘আইডেন্টিটি’ বা ‘ইগনোর্যান্স’ উপন্যাসে এই ভঙ্গিমা এবং দর্শনই যেন ক্রমশ পরতে পরতে খুলে যায়। দৈনন্দিন বাস্তবতার সঙ্গে নানা তত্ত্ব-দর্শন মিলিয়ে দিয়ে তিনি একেবারে নিজস্ব একটা শৈলী তৈরি করেছিলেন। এই অভিনবত্বের কারণে বহু পাঠকের প্রশংসা পেয়েছেন তিনি, পেয়েছেন সমালোচকদের মুগ্ধতা। কুন্দেরা ক্রমশ পরিচিত হতে শুরু করেন একজন ‘দার্শনিক লেখক’ হিসেবে। তাঁর লেখায় সার্ভেন্তাস, জিওভান্নি বোকাচ্চিও প্রমুখের প্রভাবও স্পষ্ট হতে থাকে।
নোবেল হয়তো শেষ পর্যন্ত পাননি, তবে সারা জীবন ধরে বহু পুরস্কার পেয়েছে কুন্দেরা। ১৯৮৫ সালে পান জেরুজালেম পুরস্কার। ১৯৮৭ সালে প্রবন্ধগ্রন্থ ‘দ্য আর্ট অফ নভেলে’র জন্য পান অস্ট্রিয়ার ‘স্টেট প্রাইজ ফর ইউরোপিয়ান লিটারেচার’। ২০২০ সালে তাঁকে ‘ফ্রান্জ কাফকা’ পুরস্কারে ভূষিত করে তাঁর দেশ চেকোস্লোভাকিয়া।
আরও পড়ুন: Ice Age Axe: তিন লক্ষ বছরের বেশি পুরনো বিশালাকৃতির পাথুরে কুড়ুল-সহ কয়েকশো হাতিয়ার…
কুন্দেরা বিশ্বাস করতেন, লেখক ‘কথা বলবেন’ তাঁদের লেখার মধ্য দিয়েই। তাই বেশি সাক্ষাৎকার দিতেন না, কলমকেই কথা বলাতেন।