পুড়ছে হাজার-হাজার বাড়ি-গাড়ি, ৪৫ হাজার পুলিস রাস্তায়, গ্রেফতার ১০০০! দাউ দাউ জ্বলছে সারা দেশ…France protests nearly nine hundred arrested as riots surge French president Emmanuel Macron left European Union summit to attend a crisis meeting

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ফ্রান্সে (France) ক্রমশ বাড়ছে বিক্ষোভের আগুন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিসের ব্যাপক সংঘর্ষে উত্তরোত্তর বাড়ছে এই আগুন। এই আগুন নেভাতে দেশ জুড়ে ৪৫ হাজার পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় ৯০০ বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছে। ফ্রান্সের এই অশান্তিতে (France Unrest) এখনও পর্যন্ত ৫০০টি বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০০-এরও বেশি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪০০০টিরও বেশি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গিয়েছে।

কেন এই আগুন? 

আরও পড়ুন: ভারতের লঙ্কায় ভয়ংকর ঝাল লেগে গেল বাংলাদেশের! কীভাবে?

ঘটনার সূত্রপাত পুলিসের গুলিতে ১৭ বছরের এক কিশোরের মৃত্যুতে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে উত্তপ্ত ফ্রান্স, চারদিন ধরে ফ্রান্স জুড়ে দফায় দফায় অশান্তি, সংঘর্ষ, অগ্নিকাণ্ড, গোলাগুলি চলার ঘটনা। কেন ওই কিশোরকে গুলি করল পুলিস? প্যারিসের উপকণ্ঠে রয়েছে নানতের নামের এক মফসসল শহর। সেখানে মায়ের সঙ্গে থাকত আলজেরিয়ার বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের ওই ছেলেটি, যার নাম নাহেল। মঙ্গলবার ট্রাফিক স্টপে তার গাড়ি আটকায় পুলিস। সেই সময়ে পথচলতি এক ব্যক্তি গোটা ঘটনাটা ভিডিয়ো রেকর্ড করেন। তাতে দেখা গিয়েছে, গাড়িটি থামিয়ে দুই পুলিস অফিসার মাথা ঝুঁকিয়ে কথা বলছেন। একজনের হাতে রয়েছে পিস্তল। তার পর হঠাৎই ওই অফিসার গুলি করেন নাহেলকে। পুলিস অফিসারের দাবি, তাঁর আশঙ্কা ছিল, ছেলেটি পালানোর চেষ্টা করছে, আর সেটা করতে গিয়ে তাকে এত জোরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে হত যে, তাতে যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত! অন্য লোকের প্রাণ চলে যেতে পারত! ‘অন্যের প্রাণ চলে যেতে পারত’ এই আশঙ্কায় তিনি তরতাজা এক কিশোরের প্রাণ কেড়ে নিলেন? স্বাভাবিকভাবেই তাই ওই পুলিস অফিসারের যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি অনেকের। ফ্রান্সের পুলিস তাঁকে আটক করে খুনের মামলার তদন্তও শুরু করেছে। কিন্তু জনরোষ তাতে বাগ মানেনি। 

এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদ, বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করে ফ্রান্সে। ‘দ্য পুলিস কিলস’ স্লোগান তুলে শয়ে শয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, জাতিগত পক্ষপাতে বরাবরই আক্রান্ত ফরাসি পুলিস। আলজেরিয়া, মরক্কো থেকে আসা ফ্রান্সের উদ্বাস্তু, ফরাসি মুসলমানদের সঙ্গে এরকমই বৈষম্যমূলক আচরণ করে তারা। তাই তাঁদের ক্ষোভ নির্বাপিত হচ্ছে না।

সমাজকর্মীদের মতে, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাদা চামড়ার ফরাসি নাগরিকদের তুলনায় আলজেরিয়া, মরক্কো থেকে আসা উদ্বাস্তু বা কৃষ্ণাঙ্গ ফরাসিদের প্রতি পুলিসের আচরণ বৈষম্যমূলক। কৃষ্ণাঙ্গ বা আরবীয়দের উপর অনেক বেশি অত্যাচারী ফরাসি পুলিস। এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে রাগ ছিলই। নাহেলের মৃত্যু সেই রাগের আগুন উসকে দিয়েছে। 

বিক্ষোভ এমন সুনামির মতো আছড়ে পড়েছিল যে, দিশেহারা হয়ে পড়েছিল ফরাসি পুলিস। দেশ জুড়ে অন্তত চল্লিশ হাজার পুলিস নামানো হয়েছিল পরিস্থিতি দমন করতে। প্রাথমিক ভাবে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০০ পুলিস অফিসার। দেশে অশান্তির এই খবর পেয়েই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সামিট ছেড়ে চলে আসেন ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইম্যান্যুয়েল ম্যাক্রঁ। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি বৈঠকেও বসেন তিনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার ফ্রান্স সরকারের তরফে আরও ৪৫ হাজার অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। রাস্তায় নামানো হয়েছে লাইট আর্মর্ড ভেহিকেল। সমস্ত সিগন্যালে বিশাল পুলিস বাহিনী মোতায়েন। 

আরও পড়ুন: কীসের লোভে নেপালি তরুণরা পুতিনের হয়ে অস্ত্র ধরতে ছুটছে জানেন?

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালেও ফ্রান্সে এমন বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিসের হাত থেকে পালাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যুর ঘটেছিল। সেই মৃত্যুর পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিক্ষোভ থামাতে সেই সময়ে ফ্রান্সে দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছিল ফ্রান্স সরকারকে।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

Source link