জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পাকিস্তানের এক গুপ্তচরের কাছে ভারতের মিসাইল সিস্টেম সংক্রান্ত একাধিক গোপন তথ্য পাচার করে দেওয়া। এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে বিজ্ঞানী প্রদীপ কুরলাকারের বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মহারাস্ট্র পুলিসের অ্যান্টি টেরোরিজম স্কোয়াডের কাছে ধরা পড়লেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও-র অন্যতম বিজ্ঞানী। মহারাষ্ট্রের এটিএস-এর চার্জশিটে এমনই এক তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে ডিআরডিও-র তরফ থেকে একটি নোটিসে কোনও এক অজানা নম্বরের ফোন রিসিভ কিম্বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার পরামর্শ এসেছিল। এরপরেই সদ্য ওই তথ্য পাচার মামলায় নাম আসে প্রদীপ কুরুলকারের। এটিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘মধুফাঁদ’-এ আটকা পড়েই প্রতিবেশী দেশে গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন তিনি।
কিন্তু কে এই প্রদীপ? তাঁর গ্রেফতারির পর থেকেই দেশের আনাচকানাচে ঘোরাফেরা করছে এই প্রশ্ন। ৬০ বছর বয়সি প্রদীপ পুণে ডিআরডিও-র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন। প্রদীপের জন্ম ১৯৬৩ সালে। পুণের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে খুব ভালো নম্বর পেয়ে কলেজের গণ্ডি পেরোন প্রদীপ। ১৯৮৮ সালে ডিআরডিও-তে যোগ দেন প্রদীপ। তামিলনাড়ুর আভাডিতে ডিআরডিও-র ‘কমব্যাট ভেহিক্যালস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্ট্যাবলিশমেন্ট’ বিভাগের হয়ে তিনি কাজ করতেন। কাজে যোগ দিয়ে আরও পড়াশোনার ইচ্ছা জন্মায় প্রদীপের। কাজ করতে করতেই আইআইটি কানপুরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। আইআইটি কানপুরে প্রদীপ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন। মিসাইল লঞ্চার, মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, অত্যাধুনিক রোবোটিক্স এবং মানবহীন ক্ষেপণাস্ত্রের নকশা তৈরিতে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে তাঁর। পড়াশোনা শেষে প্রদীপ আবার ডিআরডিও-তে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে খুব তাড়াতাড়ি পদোন্নতি হয় তাঁর।
আরও পড়ুন: Indian Railways: রেল যাত্রীদের জন্য বড় উপহার, ভাড়া কমবে বন্দে ভারত সহ সব ট্রেনের
আরও পড়ুন: Wealthiest Beggar: ‘পৃথিবীর সব চেয়ে ধনী ভিখারি’! কত কোটির ফ্ল্যাটে থাকে জানেন?
ভারতের হয়ে বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সামগ্রীর নকশা তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। প্রধান ডিজাইনার হিসাবে প্রদীপ হাইপারবারিক চেম্বার, মোবাইল পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মতো প্রযুক্তিতে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে এমআরএসএএম, নির্ভয় সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল সিস্টেম, প্রহর, কিউআরএসএএম এবং এক্সআরএসএএম এর জন্য মিসাইল লঞ্চার তৈরির কাজেও অবদান রয়েছে প্রদীপের। এবার সেই প্রদীপকেই গ্রেফতার করেছে মহারাষ্ট্রের এটিএস। পুলিস প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে সুন্দরী মহিলাদের ছবি দেখিয়ে প্রদীপের সামনে ফাঁদ পাতা হয়। এর পরই নাকি তিনি গত বছর ছদ্মবেশী পাক গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ভিডিয়ো কল এবং হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে পাক গোয়েন্দা সংস্থা ‘পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ (পিআইও)’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। এরপর ডিআরডিও-র এই বিজ্ঞানী পাকিস্তানি এক গুপ্তচরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত গোপন তথ্য সরবরাহ করেছেন। সেই পাকিস্তানি এজেন্ট ধৃত বিজ্ঞানী প্রদীপ কুরলাকারকে ‘জারা দাশগুপ্ত’ নাম নিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এমনটাই চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রদীপ ডিআরডিও-র অন্যতম শীর্ষ পদে ছিলেন। তাই অনেক গোপন নথি সম্পর্কেও জানতেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রদীপ পদের অপব্যবহার করায় সংবেদনশীল সরকারি নথি পাকিস্তানের হাতে চলে যেতে পারে, যা পরবর্তী কালে ভারতের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মুম্বইয়ের কালাচৌকি এটিএস পুলিস স্টেশনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল। এরমধ্যে অন্যতম হল ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’। নাম প্রকাশে এক এটিএস আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতমধ্যেই বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে। তথ্য পাচারের অভিযোগে তিনি গত ৩ মে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)