জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাণিজ্যিক বিমান দুর্ঘটনা কিন্তু অত্যন্ত বিরল। ইন্টারন্যশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA) অনুসারে, প্রতি বছর ৩ কোটিরও বেশি বিশ্বব্যাপী যাত্রীবাহী বিমান কোনও দুর্ঘটনা ছাড়াই উড়ে যায় এবং নিরাপদে অবতরণ করে। ২০২২ সালে যাত্রী এবং ক্রুদের প্রাণহানির সঙ্গে জড়িত মাত্র পাঁচটি মারাত্মক দুর্ঘটনাই রয়েছে। আমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার (Ahmedabad Plane Crash) পর দেশের বহু মিডিয়ার ফোকাসে বিমান। তবে শুনলে অবাক হবেন যে, ১৯৪৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ৮টি যাত্রীবাহী বিমান নিখোঁজ! যে রহস্য আজও অমীমাংসিত!
১) ইজিপ্ট এয়ার ফ্লাইট ৮০৪ (১৯ মে ২০১৬)
ফ্রান্সের প্যারিস থেকে মিশরের কায়রোতে ৬৬ জন যাত্রী নিয়ে উড়েছিল এয়ারবাস ৩২০। বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার করা হলেও, পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ১৩০০০ ফুট গভীর জলে বিমানটি কেন ডুবে গেল, তা নিয়ে এখনও রহস্য রয়েছে! তদন্তের প্রথম দিকে, মিশরের বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় একটি সন্ত্রাসী বোমা হামলাকে সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল এবং ঘোষণা করা হয়েছিল যে, নিহতদের দেহাবশেষে বিস্ফোরকের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তবে, ফ্রান্সের বেসামরিক বিমান চলাচল দুর্ঘটনা ব্যুরো ২০১৮ সালে রিপোর্ট করে যে, ফ্লাইট ডেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনই সম্ভবত দুর্ঘটনার কারণ। বিমানটি রাডার থেকে নিখোঁজ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে, বিমানের অনবোর্ড রিপোর্টিং সিস্টেম থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছিল যে, ধোঁওয়া সনাক্ত করা হয়েছে। রেকর্ডাররা বিমানে ধোঁয়ার উপস্থিতি প্রমাণ করে এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলে যে, বিমানটি অস্বাভাবিক ভাবে তীক্ষ্ণ বাঁ-দিকে টার্ন নিয়েছিল। তারপরে আবার রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে ডানদিকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল। যদি বোমা বিস্ফোরণ হত, তাহলে সেটা একটা ভিন্ন রাস্তায় হত, কিন্তু তদন্তকারীরা বলেছেন যে, ধোঁওয়া বের হওয়ায় দ্রুত অবতরণ করতে হয়েছিল। পরবর্তী তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে, ককপিটে একজন পাইলট সিগারেটে সুখটান দেওয়ায় অক্সিজেন মাস্ক লিক হওয়ার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে
২) মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ (৮ মার্চ ২০১৪)
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০-র নিখোঁজ ঘটনা, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান রহস্য। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ বোয়িং ৭৭৭ কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে ভ্যানিশ হয়ে যায়। স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে, বিমানটি সম্ভবত পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া উপকূলের, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের কোথাও ভেঙে পড়েছিল। তবে দু’টি বড় অনুসন্ধানেও উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
কুয়ালালামপুর থেকে বেজিং উড়ে যাওয়ার পথে, প্রায় ৪০ মিনিট পর বিমানটির শেষ ট্রান্সমিশন আসে। ভিয়েতনামের আকাশসীমায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ ‘শুভ রাত্রি, মালয়েশিয়ান তিন সাত শূন্য’ বলে সাইন অফ করেছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ট্রান্সপন্ডারটি বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে সহজে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। মিলিটারি রাডারে দেখা গিয়েছিল যে, বিমানটি উত্তর মালয়েশিয়া এবং পেনাং দ্বীপের উপর দিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য তার উড়ানের পথ ছেড়ে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের প্রান্তের দিকে আন্দামান সাগরে চলে গিয়েছে। এরপর এটি দক্ষিণে ঘুরে যায় এবং যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ইনমারস্যাট স্যাটেলাইট এবং বিমানের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সংযোগের তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং চিন এক যোগে, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের জলের নীচের ১২০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪৬,৩৩২ বর্গমাইল) এলাকা অনুসন্ধান শুরু করে। প্রায় ২০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (১৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে অনুসন্ধানটি দু’বছর পর ২০১৭-র জানুয়ারিতে স্থগিত করা হয় এবং বিমানের কোনও চিহ্নও পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালে, মার্কিনি অনুসন্ধান সংস্থা ওশেন ইনফিনিটির কাছ থেকে তিন মাসের অনুসন্ধানের জন্য ‘নো-কিওর, নো-ফি’ প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। যার অর্থ বিমান খুঁজে পেলেই কোম্পানিটি কেবল অর্থ পাবে। এই অনুসন্ধান মূল টার্গেট এলাকার উত্তরে ১১২,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪৩,২৪৩ বর্গমাইল) এলাকা জুড়ে হয়েছিল এবং এবারও সেই নিস্ফলা!
২০১৮ সালের মে মাসে এই অনুসন্ধান শেষ হয়েছিল। আফ্রিকার উপকূল এবং ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জে ৩০ টিরও বেশি সন্দেহভাজন বিমানের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হয়েছে, তবে কেবল তিনটি ডানার টুকরোই এমএইচ ৩৭০-এর বলে নিশ্চিত করা গিয়েছে। বিমানের সম্ভাব্য অবস্থান সংকুচিত করার আশায় বেশিরভাগ ধ্বংসাবশেষ ড্রিফট প্যাটার্ন বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয়েছিল। ০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত এমএইচ ৩৭০-এর-এর নিখোঁজ রিপোর্টে ৪৯৫ পাতার একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, বোয়িং ৭৭৭-এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভবত ইচ্ছাকৃত ভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। যাতে এটির পথভ্রষ্ট হয়। তবে তদন্তকারীরা কে দায়ী তা নির্ধারণ করতে পারেননি। কুয়ালালামপুর এবং হো চি মিন সিটির বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলির ভুলও তুলে ধরা হয়েছে। এবং পুনরাবৃত্তি এড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে।
এমএইচ ৩৭০-এর ঠিক কী হয়েছিল, সেই সম্পর্কে তদন্তকারীরা কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার উপর তা নির্ভর করে। এমএইচ ৩৭০-এর দুর্ঘটনাস্থল সনাক্ত করতে না পারায়, অসংখ্য ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উস্কে দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি বা রিমোট-নিয়ন্ত্রিত দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে ভিনগ্রহী অপহরণ এবং রাশিয়ান চক্রান্তের মতো আরও অদ্ভুত ব্যাখ্যা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কিছু বিমান বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা ছিল যে বিমানটি ইচ্ছাকৃত ভাবে একজন অভিজ্ঞ পাইলট দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা বলেছেন যে পাইলট এবং সহ-পাইলট উভয়ের পটভূমি, আর্থিক বিষয়, প্রশিক্ষণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সন্দেহজনক কিছু ছিল না।
ব্রিটেন এবং আমেরিকায় অবস্থিত সামুদ্রিক অনুসন্ধান সংস্থা ওশেন ইনফিনিটি ফের অনুসন্ধানের দায়িত্বে। সংস্থাটি ২০১৮ সালে একটি অভিযান পরিচালনা করে ব্যর্থ হয়েছিল। সেই অনুসন্ধান ‘নো-কিওর, নো-ফি’ ভিত্তিতে হয়েছিল। চলতি বছরও সংস্থাটি একই নীতিতে চলছে। সর্বশেষ চুক্তিটি ১৮ মাসের জন্য এবং অভিযান সফল হলে কোম্পানিটি ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে। বর্তমান অনুসন্ধানটি দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের প্রায় ১৫,০০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত হবে। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের মতে, নতুন অনুসন্ধানটি স্যাটেলাইট সংকেত এবং বিঘ্নিত রেডিও ট্রান্সমিশন সহ তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে
১১ বছর পরেও এমএইচ নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবার এখনও উত্তরের আশায় রয়েছে। গত মার্চে বিমান নিখোঁজের ১১তম বার্ষিকীতে, চিনা যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন বেজিংয়ে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা সরকারি ভবন এবং মালয়েশিয়ান দূতাবাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। হাতে প্ল্যাকার্ড ধরেছিলেন অনেকে। যাতে লেখা ছিল,’১১ বছরের অপেক্ষা এবং যন্ত্রণার শেষ কখন হবে?’ অন্যরা চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দাও!’ বিমানের বেশিরভাগ যাত্রীই চিনের ছিলেন। বাকিরা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং বেশ কিছু দেশের ছিলেন।
৩) ফ্লাইং টাইগার লাইন ফ্লাইট ৭৩৯ (১৬ মার্চ, ১৯৬২)
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শুরুর দিকের ঘটনা। ৯৩ জন মার্কিন সেনা রেঞ্জার্সকে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাভিস বিমান ঘাঁটি থেকে সাইগনে গোপন মিশনে পাঠানো হয়েছিল। গুয়ামে জ্বালানি ভরার পর, তাদের লকহিড এল-১০৪৯ সুপার কনস্টেলেশন দক্ষিণ ভিয়েতনামী সামরিক বাহিনীর ৩ সদস্য এবং ১১ জন ক্রু সদস্যকে বহন উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাদের পরের স্টপওভার ফিলিপাইনের ক্লার্ক বিমান ঘাঁটিতে। কিন্ত সেই বিমান কখনও আর অবতরণ করেনি। যদিও উড়ানের পরিস্থিতি আদর্শ ছিল এবং কোনও বিপদ সংকেতও পাওয়া যায়নি। ১৯৩৭ সালে আমেরিকার বিমানচালিকা অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে, ফ্লাইং টাইগার লাইন ফ্লাইট ৭৩৯-এর অনুসন্ধান ছিল প্রশান্ত মহাসাগরে সবচেয়ে বড় বিমান ও সমুদ্র উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছিল। ১৩০০ সদস্যের অনুসন্ধানকারী দল ১৪৪০০০ বর্গমাইল অনুসন্ধান করেও কিছুই পায়নি। একজন ইতালীয় ক্রু দেখেন যে, একটি তেলের সুপার ট্যাঙ্কারের ভয়ংকর বিষ্ফোরণে তীব্র আলো দেখেছিলেন। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সময়ে তার অবস্থানের চারপাশে দুটি জ্বলন্ত বস্তু সমুদ্রে ডুবে যেতে দেখেছেন বলেও জানিয়েছেন। এই বিমান নিখোঁজের আগে আলাস্কায় আরেকটি ফ্লাইং টাইগার বিমান ভেঙে পড়েছিল। যার ফলে ৭ আরোহীর মধ্যে একজন প্রাণ হারিয়ে ছিলেন। ফলে নাশকতার বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছিল, কিন্তু সিভিল অ্যারোনটিক্স বোর্ড শেষ পর্যন্ত কোনও পুনরুদ্ধারযোগ্য প্রমাণের অভাবে সম্ভাব্য কারণ নির্ধারণ করতে পারেনি।
৪) প্যান অ্যাম ফ্লাইট ৭ (৯ নভেম্বর, ১৯৫৭)
সান ফ্রান্সিসকো থেকে ৩৬ জন যাত্রী এবং ৮ জন ক্রু সদস্য নিয়ে বোয়িং ৩৭৭ স্ট্র্যাটোক্রুজার বিমানটি বিশ্ব ভ্রমণের প্রথম ধাপে ছিল। বিলাসবহুল এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। ‘ওশেন লাইনার অফ দ্য় এয়ার’ বিমানটিতে যাত্রীরা ৬০ ইঞ্চি লম্বা লেগরুম পেতেন। হেলান দিয়ে বসা স্লিপার সিটও ছিল। ঘোড়ার নালের আকৃতির ককটেল লাউঞ্জ এবং ক্যাভিয়ার এবং শ্যাম্পেন সহ ৭-কোর্স ডিনারও পেয়েছিলেন যাত্রীরা। প্যান অ্যাম ফ্লাইট ৭ প্রায় অর্ধেক পথ পাড়ি দেওয়ার সময় হঠাৎ করেই রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়! বিমান থেকে কোনও বিপদ সংকেত পাঠানো হয়নি। পাঁচ দিনের অনুসন্ধানের পর মার্কিন নৌসেনা কেরিয়ার হনুলুলুর প্রায় ১০০০ মাইল পূর্বে ভাসমান ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছিল এবং ১৯টি দেহ উদ্ধার হয়। নিহতদের বেশিরভাগই লাইফ জ্যাকেট পরেছিলেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, বিমানটি প্রশান্ত মহাসাগরে ডোবার জন্য প্রস্তুত ছিল। বিমান এবং বাকি ২৫ জনকে কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও পরীক্ষায় উদ্ধার হওয়া বেশ কয়েকটি মৃদেহে কার্বন মনোক্সাইডের উচ্চ মাত্রা পাওয়া গিয়েছিল। সিভিল অ্যারোনটিক্স বোর্ড কোনও ত্রুটি বা নাশকতার প্রমাণ পাননি।
৫) কানাডিয়ান প্যাসিফিক এয়ার লাইনস (২১ জুলাই, ১৯৫১)
কোরিয়ান যুদ্ধ যখন তীব্র আকার ধারণ করছিল, তখন একটি ডগলাস ডিসি-৪ কোরিয়ান বিমান পরিবহণে সহায়তা করার জন্য কানাডার ভ্যাঙ্কুভার থেকে জাপানের টোকিওর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল। ৩১ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু নিয়ে কানাডিয়ান প্যাসিফিক বিমানটি আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজের কাছে জ্বালানি ভরার জন্য, পৌঁছানোর সময় বৃষ্টিপাত, কম দৃশ্যমানতা এবং বরফের সম্মুখীন হয়। পৌঁছানোর প্রায় ৯০ মিনিটের মধ্যে আলাস্কার প্যানহ্যান্ডেলের কাছে চেক ইন করার সময় বিমানটি কোনও সমস্যার কথা জানায়নি। আর কখনও বিমানের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। আমেরিকান এবং কানাডিয়ান উদ্ধারকারী দল কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছিল কিন্তু ধ্বংসাবশেষের কোনও চিহ্ন খুঁজে পায়নি।
৬) নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ২৫০১ (২৩ জুন, ১৯৫০)
৫৫ জন যাত্রী এবং ৩ জন ক্রু নিয়ে ডিসি-৪ প্রপ বিমানের পাইলট যখন মধ্যরাতে মিশিগান হ্রদের কাছে পৌঁছন, তখন এক শক্তিশালী ঝড়ের মুখে পড়েছিল নর্থওয়েস্ট ওরিয়েন্ট এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ২৫০১। ঝড়ের তীব্রতা এবং ঘনঘন বজ্রপাতের কারণে, ইতিমধ্যেই পশ্চিমমুখী আরও তিনটি বিমানের পাইলটরা পিছনে ফিরে যান। মিশিগানের বেন্টন হারবারের কাছে, উত্তর-পশ্চিম বিমানের পাইলট কোনও কারণ না দেখিয়ে ৩৫০০ ফুট থেকে ২৫০০ ফুট উচ্চতায় নামানোর অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু এলাকায় অন্যান্য বিমান থাকার কারণে বিমান ট্র্যাফিক কন্ট্রোলাররা অনুরোধটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর এটাই ছিল পাইলটের শেষ ট্রান্সমিশন। তখন তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে সিয়াটেলের দিকে যাচ্ছিলেন। মিনিয়াপোলিস এবং ওয়াশিংটনের স্পোকেনের ওই বিমানের স্টপওভার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই মাটিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা একটি স্টক কারের মতো কিছু দেখেন ও স্পটারিং বিমানের আওয়াজ পান। ভয়াবহ ঝলকানিও দেখেছিলেন আকাশে।
মার্কিন কোস্ট গার্ড মিলওয়াকির কাছে মিশিগান হ্রদে তেলের টুকরো দেখে সেখানে প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছিলেন। তবে, দু’দিন পরে অনুসন্ধানকারী দলগুলি মিশিগানের সাউথ হ্যাভেন থেকে ১০ মাইল দূরে নর্থওয়েস্ট লোগো সম্বলিত কম্বল, ফোম রাবারের কুশন এবং দেহাবশেষ আবিষ্কার করেন এবং উদ্ধারকারীরা বুঝতে পারে যে, তাঁরা হ্রদের ভুল জায়গায় বিমানটি খুঁজছিলেন। হ্রদের অন্ধকার তলদেশে ৮ ইঞ্চিরও কম দৃশ্যমানতা থাকায়, ডুবুরিরা বিমানটি সনাক্ত করতে পারেননি এবং মার্কিন সিভিল অ্যারোনটিক্স বোর্ড কেবল এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সেই সময়ে আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক বাণিজ্যিক বিমান দুর্ঘটনার কারণ অজানাই ছিল। সন্দেহভাজন দুর্ঘটনাস্থলের কাছে হ্রদের তলদেশের ৩০০ বর্গমাইল অনুসন্ধানে ১৪টি ডুবন্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ফ্লাইট ২৫০১ এর কোনও চিহ্ন মেলেনি।
৭) ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ স্টার এরিয়েল (১৭ জানুয়ারি, ১৯৪৯)
দীর্ঘকাল ধরে নাবিকদের জন্য ‘গোধূলি অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল, বিমান চলাচলের যুগে থেকেই যে রহস্যের কিনারা হয়নি। বারমুডা, পুয়ের্তো রিকো এবং ফ্লোরিডার দক্ষিণ প্রান্তের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরের জলের উপর দিয়ে বহু বিমান অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। যদিও পাইলট আবহাওয়ার অবস্থা ভালো থাকার কথা জানিয়েছিলেন। বারমুডা থেকে জামাইকা যাওয়ার পথে স্টার এরিয়েলের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ফ্লাইটটি ছাড়ার এক ঘণ্টা পরেই। ব্রিটিশ তদন্তকারীরা অ্যাভ্রো টিউডর মার্ক ফোরের এর ধ্বংসাবশেষ বা ২০ আরোহীর কোনও চিহ্ন খুঁজে পাননি। প্রমাণ ছাড়াই তদন্তকারীরা এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হন যে, দুর্ঘটনার কারণ অজানা।
৮) ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ স্টার টাইগার (৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮)
স্টার এরিয়েল দুর্ঘটনার কথাও বলতে হবে। ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ নিখোঁজ হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ফের নিখোঁজ। ৩১ জন যাত্রী নিয়ে স্টার টাইগার, আজোরেস থেকে বারমুডার আকাশসীমায় প্রবেশের কিছুক্ষণ আগে স্বাভাবিক রেডিও যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। তবে বিমানটি কখনও অবতরণ করেনি এবং অ্যাভ্রো টিউডর বিমান থেকে কোনও দুর্যোগের বার্তাও আসেনি। পাঁচ দিনের উদ্ধার অভিযানে কোনও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি এবং তদন্তকারীরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে একটি অমীমাংসিত রহস্য
আরও পড়ুন: ২৯৭ মাইলের সফরে ১০৬ যাত্রী, ট্রেন আচমকা টানেলে ঢুকতেই অদৃশ্য…
আরও পড়ুন: ৩৭ বছর আগে মাঝ আকাশে ভ্যানিশ হওয়া বিমান ফিরল ৬৩ জনকে নিয়ে…
আরও পড়ুন: ৩৫ বছর আগে মাঝ আকাশে ভ্যানিশ হওয়া বিমান ফিরল ৯২ নরকঙ্কাল নিয়ে
আরও পড়ুন: ২৩৯ জনকে নিয়ে মাঝ আকাশে ভ্যানিশ বিমান, ৪০ মিনিটেই…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)